Thursday, August 11, 2016

তিন শ্রেণীর ব্যক্তিকে আঘাত করলে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে !!!

তিন শ্রেণীর ব্যক্তিকে আঘাত করলে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে !!!


যে তিন শ্রেণীর ব্যক্তিকে আঘাত করলে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে !!!
ইসলাম সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকারের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।
সমাজের যারা প্রতিবন্ধীদের অবহেলা ও অবজ্ঞার চোখে দেখে, তাদের মনে রাখা দরকার, (আল্লাহ না করুন) বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও অসুস্থতার কারণে একজন সুস্থ-সবল মানুষও যে কোনো সময় শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে। তাই প্রত্যেক সুস্থ মানুষের উচিত, শারীরিক সুস্থতার জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়ানো। কারণ তাদেরও অধিকার রয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাপনের।




Sunday, August 7, 2016

পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে মহানবী (সা.) যা করতে বলেছেন

পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে মহানবী (সা.) যা করতে বলেছেন


পরিপূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তি চিনে নেয়া প্রসঙ্গে হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত একটি হাদিসে উল্লেখ আছে। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আনাস ইবন মালেক রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাদের নিকট তোমাদের মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে অধিক প্রিয় না হব।[বুখারী, হাদীস: ১৫]
ওমর রা. বলেন, “আল্লাহর শপথ করে বলছি, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার নিকট দুনিয়ার সব কিছু হতে অধিক প্রিয় তবে আমার জীবন থেকে নয়। তার কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার জীবন থেকেও অধিক প্রিয় না হব।
এ কথা শোনে ওমর রা. বললেন, আল্লাহর শপথ আপনি এখন আমার নিকট আমার জীবনের চেয়েও অধিক প্রিয়। তারপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ওমর তুমি এখন পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারলে”।[বুখারী, হাদীস: ৩৬৯৪]

Saturday, August 6, 2016

ইসলামে স্বামীর ভালবাসা অর্জনের উপায় !

ইসলামে স্বামীর ভালবাসা অর্জনের উপায়



  • নারীসুলভ আচরণ করুন (যেমনঃ কোমল হওয়া), স্বামীরা তাদের স্ত্রীর জায়গায় কোন পুরুষ চায় না!
  • সুন্দর/আকর্ষণীও পোশাক পরুন। আপনি যদি গৃহিণী হন, সারাদিন ধরে রাতের পোশাক (ঢিলাঢালা আরামদায়ক পোশাক) পরে থাকবেন না।
  • ঘাম/মশলা জাতীয় গন্ধ থেকে পরিচ্ছন্ন ও সুরভিত থাকুন।
  • আপানর স্বামী বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার সাথে সাথে আপানার যাবতীয় সমস্যার কথা বলা শুরু করবেন না। তাকে কিছুটা মানসিক বিরতি দিন।
  • বার বার জিজ্ঞেস করবে না, ‘কি ভাবছ?’
  • অনবরত দোষারোপ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ আপনাকে আসলেই সত্যিকার অর্থে অভিযোগ করার মত কিছু দেন।
অন্যের কাছে নিজেদের স্বামী-স্ত্রীর সমস্যার কথা বর্ণনা করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন;এমনকি সাহায্য বা পরামর্শ চাওয়ার অজুহাতেও না! আপনি যদি মনে করেন আপনার বৈবাহিক সমস্যার আইনানুগ সমাধান প্রয়োজন, তাহলে এমন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে যান যেঃ
কোন অন্যায়ের ব্যপারে ভুল সংশোধনের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করে দিতে পারে, যাতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে আবার সুন্দর সমন্বয়ে মিল হয়ে যায়, অথবা
উভয়পক্ষের সম্মতিতে সৌহার্দপূর্ণভাবে বিচ্ছেদ করাতে পারেন।
  • আপানর শাশুড়ির সাথে ভাল আচরণ করুন, যেমনটি আপনি চান আপানার স্বামী আপানার মায়ের সাথে করুক।
  • ইসলামে স্বামী স্ত্রীর অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জানুন। অধিকার আদায়ের চেয়ে আপনার দায়িত্ব সঠিকভাবে সম্পাদনের ব্যপারে আগে সজাগ হন।
  • যখন সে ঘরে আসে, দরজায় এমন ভাবে ছুটে যান যেন আপনি তারই অপেক্ষায় ছিলেন। হাসিমুখে তাকে সালাম দিন।
  • আপনার বাসস্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন; অন্তত আপনার স্বামী যতটুকু পরিচ্ছন্ন দেখতে পছন্দ করে।
  • তাকে এমন বিষয়ে প্রশংসা করুন যে বিষয়ে তিনি নিজে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নন (যেমন, চেহারা, বা বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি)। এটা তার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
  • তাকে বলুন, স্বামী হিসেবে তিনি শ্রেষ্ঠ।
  • তার পরিবার পরিজনের সাথে প্রায়ই যোগাযোগ করুন।
  • তাকে সহজ কোন গৃহস্থালি কাজ দিন, কাজটি করে ফেললে তাকে ধন্যবাদ জানান। এতে সে আরও উৎসাহিত হবে।
  • সে যখন কোন একঘেয়ে কথা বলে, তার কথা ধৈর্য ধরে শুনুন। মাঝে মাঝে তাকে প্রশ্নও করুন যাতে সে বুঝতে পারে আপনি তার কথা আগ্রহ নিয়ে শুনছেন।
  • তাকে ভাল কাজে উৎসাহিত করুন।
তার মেজাজ খারাপ থাকে, তাকে কিছুটা সময় একা থাকতে দিন। ইনশাআল্লাহ, একসময় তার মেজাজ ঠিক হয়ে যাবে।
  • আপানাকে খাদ্য ও আশ্রয় দেওয়ার জন্য তাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান। এটি অনেক বড় ব্যপার।
  • সে যদি আপানার সাথে রেগে গিয়ে চেঁচাতে থাকে, আপনি চুপ থেকে তাকে চেঁচাতে দিন। দেখবেন আপনাদের বিবাদ অনেক দ্রুত থেমে গেছে। পরে যখন সে শান্ত হবে, তখন আপনি আপনার কথা বোঝাবেন।
  • যখন আপনি তার উপর রেগে যান, তখন বলবেন না যে তিনি আপনাকে রাগিয়েছেন, বরং বলুন তার কাজে আপনি আপসেট হয়েছেন। আপনার রাগকে তার দিকে নির্দেশ না করে তার কাজ বা উদ্ভুত পরিস্থিতির দিকে নির্দেশ করুন।
  • মনে রাখবেন, আপনার স্বামীরও আবেগ অনুভুতি আছে, কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
  • তাকে তার বন্ধুদের সাথে কোন রকম অপরাধবোধ ছাড়া কিছু সময় কাটাতে দিন, বিশেষতঃ যদি তারা ভাল মানুষ হয়। তাকে বাইরে যেতে উৎসাহ দিন যাতে সে নিজেকে ঘরের ভেতর ‘আবদ্ধ’ বোধ না করে।
  • স্বামী যদি আপনার কোন সামান্য কাজে বা অভ্যাসে বিরক্ত হয় (যেটি আপনি সহজেই নিয়ন্ত্রন করতে পারেন), সেটি করা বন্ধ করে দিন।
আপনার মনের কথা তাকে খোলাখুলি বলতে শিখুন; সে সবসময় বুঝে নেবে বা অনুমান করতে পারবে এমন চিন্তা করবেন না। আপনার অনুভূতি প্রকাশ করা শিখুন।
  • ছোট ছোট বিষয়ে রেগে যাবেন না।
  • তার সাথে হাসি মশকরা করুন, যাতে আপনাদের দুই জনের মনই প্রফুল্ল হয়।
  • তাকে বলুন, আপনি স্ত্রী হিসাবে সেরা, এবং এমন বিষয়ে নিজের উল্লেখ করুন যেটা আপনি জানেন আসলেই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু অহংকার করে নয়, বিনয় এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে।
  • ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে- “The way to a man’s heart is through his stomach” তাই তার পছন্দের খাবার তৈরি করা শিখুন।
  • আপনার পরিচিত বা আত্মীয় স্বজনের কাছে কক্ষনও তার বদনাম করবেন না। তারা যদি একথা মেনে নেয় ও বিশ্বাস করা শুরু করে, তাহলে তা আপানকেই পাল্টা আহত করবে। আপনি নিজেই তখন হীনমন্যতায় ভুগবেন এই ভেবে যে আপনার স্বামী খারাপ, আবার অন্যরাও ভাববে যে আপনার স্বামী খারাপ। আল্লাহ বলেছেন –

وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ

“ধ্বংস ওই প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে পেছনে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে।” (সুরা হুমাজাঃ১)
  • বুদ্ধিমত্তার সাথে আপনার সময়টাকে কাজে লাগান, এবং আপনার দায়িত্ব সুন্দরভাবে সম্পাদন করুন। এতে আপনিও খুশি হবেন, আপনার স্বামীরও ভাল লাগবে।
  • উপরের  সবগুলো কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করুন; দেখবেন আপনি যা করছেন আল্লাহ তায়ালা তাতে বরকত দেবেন।
  • স্বামী স্ত্রী একে অপরের পছন্দ-অপছন্দ, করণীও-বর্জনীয় বিষয়গুলো বিজ্ঞতার সাথে আলোচনা করবেন। স্বামীকে এমন ভাবে আদেশ বা নির্দেশ দেবেন না যেন মনে হয় সে আপনার ‘অধীনস্ত’।  বরং কুরআনে বলা হয়েছে –

هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ            ইসলামে স্বামীর ভালবাসা

তারা তোমাদের জন্য আবরণ, এবং তোমরা তাদের জন্য আবরণ (সুরা বাকারাঃ১৮৭)
  • আপনার স্বামীকে বারবার বলুন আপনি তাকে কত ভালোবাসেন।
  • আপনার স্বামীর সাথে খেলাধুলায় প্রতিযোগিতা করুন, এবং তাকে জিততে দিন।
  • সুস্থ থাকুন, এবং নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নিন, যাতে বলিষ্ঠ ভাবে একজন মা, স্ত্রী ও গৃহিণীর দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ এতে আপনি মোটা হবেন না।
  • আচার-আচরনে মার্জিত থাকুন (যেমনঃ ঘ্যানঘ্যান করা, অতি উচ্চস্বরে হাসা বা কথা বলা, থপথপ করে সশব্দে হাঁটাচলা করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন।)
  • স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে যাবেন না, আর তাকে না জানিয়ে তো অবশ্যই বের হবেন না।
  • খেয়াল রাখুন তার পরিধেয় কাপড়গুলো যেন নিয়মিত পরিষ্কার থাকে।
  • জরুরি অথবা বিতর্কিত বিষয়ে তার সাথে এমন সময় আলোচনা করবেন না যখন সে ক্লান্ত অথবা তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে। সঠিক সময়ে সঠিক আলোচনা করুন।
  • আপনার স্বামী আপনার জন্য কষ্ট করে কাজ করে উপার্জন করছেন এবং আপনার খাওয়া-পরার বন্দোবস্ত করছেন- এই ব্যপারটির সবসময় প্রশংসা করুন। এতে তার কাজের স্পৃহা বাড়বে।
  • আপনার চুল সব সময় আঁচড়ানো রাখুন।
  • মাঝে মাঝে উপহার দিন। উপহার স্বরূপ তাকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসও দিতে পারেন।
  • তার আগ্রহ ও শখের ব্যপারে আপনিও আগ্রহী হওয়ার চেষ্টা করুন।
  • অতিরিক্ত কেনাকাটা করবেন না…তার সমস্ত টাকা খরচ করে ফেলবেন না।
  • তার জন্য নিজেকে আকর্ষণীও করে সাজান, তার সাথে খুনসুটি করুন।
  • আপনার ত্বকের যত্ন নিন, বিশেষতঃ চেহারার। চেহারাই আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
  • অন্তরঙ্গ ব্যপারে যদি আপনার কোন অসন্তুষ্টি থাকে, তাকে জানান, তার সাথে কথা বলুন। তাকে বুঝতে সাহায্য করুন। নীরব থেকে পরিস্থিতি খারাপ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না।
  • প্রতিদিন, প্রতি ওয়াক্তের নামাজে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আপনাদের মধ্যকার ভালবাসার ও সহমর্মিতার বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে দেন এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করেন। দোয়ার মত কার্যকরী কিছুই নেই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা তখনই থাকে যখন আল্লাহ তাদের মাঝে এটা দেন।
  • কক্ষনো নিজের স্বামীর সাথে অন্যদের স্বামীর তুলনা করবেন না। যেমনঃ কখনও বলবেন না, ‘অমুকের স্বামী তো এমন করে না, তুমি কেন এমন কর…’
  • আপনার স্বামী যেমন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন। কারণ, কেউ নিখুঁত নয়, আপনিও নন। আর যদি, ত্রুটিহীন, নিখুঁত সঙ্গী চান তাহলে জান্নাতে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ইনশাআল্লাহ সেখানে আপনি এবং আপনার স্বামী দু’জনেই হবেন নিখুঁত ও ত্রুটিহীন।
  • তাহাজ্জুদ নামাজের সময় তাকে ডাকুন এবং আপনার সাথে তাকেও নামাজ পড়তে বলুন।
  • আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আপনাদের দুজনকেই মুত্তাকী হতে সাহায্য করেন।
  • সর্বাগ্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করুন। যদি সমস্ত স্ত্রীরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায় রত থাকে, নিশ্চিতভাবেই তারা তাদের স্বামীদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারবে। আর মনে রাখবেন, আল্লাহ যদি আপনার উপর সন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে ফেরেশতারা আপানাকে ভালবাসবে, সমস্ত সৃষ্টি আপনাকে ভালবাসবে।
আল্লাহ যেন সকল স্বামী স্ত্রীর বন্ধনকে হেফাজত করেন, এবং দ্বীনের শ্রেষ্ঠ আদব সমূহ বোঝার এবং তা কাজে লাগিয়ে সংসার জীবনকে সুন্দর ভাবে পরিচালনা করার তৌফিক দেন। আমীন।

স্মৃতি শক্তি বাড়াতে মহানবী (সাঃ) ৯টি কাজ করতে বলেছেন!


স্মৃতি শক্তি বাড়াতে মহানবী (সাঃ) ৯টি কাজ করতে

বলেছেন!



আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাদের কোন কিছু মনে থাকে না। আবার এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যারা কোন কিছু খুব বেশি দিন মনে রাখতে পারেন না। এমন সমস্যা মূলত দূর্বল স্মৃতিশক্তির কারণে হয়ে থাকে।  সৃতি শক্তি বাড়াতে মহানবী (সাঃ) – যে ৯টি কাজ  করতে বলেছেন তা হলো-
১. ইখলাস বা আন্তরিকতাঃ
যে কোনো কাজে সফলতা অর্জনের ভিত্তি হচ্ছে ইখলাস বা আন্তরিকতা। আর ইখলাসের মূল উপাদান হচ্ছে বিশুদ্ধ নিয়ত। নিয়তের বিশুদ্ধতার গুরুত্ব সম্পর্কে উস্তাদ খুররাম মুরাদ বলেন, “উদ্দেশ্য বা নিয়ত হল আমাদের আত্মার মত অথবা বীজের ভিতরে থাকা প্রাণশক্তির মত। বেশীরভাগ বীজই দেখতে মোটামুটি একইরকম, কিন্তু লাগানোর পর বীজগুলো যখন চারাগাছ হয়ে বেড়ে উঠে আর ফল দেওয়া শুরু করে তখন আসল পার্থক্যটা পরিস্কার হয়ে যায় আমাদের কাছে। একইভাবে নিয়ত যত বিশুদ্ধ হবে আমাদের কাজের ফলও তত ভালো হবে।” এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।” [সূরা আল-বায়্যিনাহঃ ৫]
তাই আমাদের নিয়ত হতে হবে এমন যে, আল্লাহ আমাদের স্মৃতিশক্তি যেনো একমাত্র ইসলামের কল্যাণের জন্যই বাড়িয়ে দেন।
২. দু’আ ও যিকর করাঃ
আমরা সকলেই জানি আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহর কাছে দু’আ করা যাতে তিনি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেন এবং কল্যাণকর জ্ঞান দান করেন। এক্ষেত্রে আমরা নিন্মোক্ত দু’আটি পাঠ করতে পারি, “হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।” [সূরা ত্বা-হাঃ ১১৪]
তাছাড়া যিকর বা আল্লাহর স্মরণও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “…যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন…” [সূরা আল-কাহ্‌ফঃ ২৪]
তাই আমাদের উচিত যিকর, তাসবীহ (সুবহান আল্লাহ), তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবীর(আল্লাহু আকবার) – এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আল্লাহকে স্মরণ করা।
৩. পাপ থেকে দূরে থাকাঃ
প্রতিনিয়ত পাপ করে যাওয়ার একটি প্রভাব হচ্ছে দুর্বল স্মৃতিশক্তি। পাপের অন্ধকার ও জ্ঞানের আলো কখনো একসাথে থাকতে পারে না। ইমাম আশ-শাফি’ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আমি (আমার শাইখ) ওয়াকীকে আমার খারাপ স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলাম এবং তিনি শিখিয়েছিলেন আমি যেন পাপকাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখি। তিনি বলেন, আল্লাহর জ্ঞান হলো একটি আলো এবং আল্লাহর আলো কোন পাপচারীকে দান করা হয় না।” আল-খাতীব আল-জামী’(২/৩৮৭) গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া বলেনঃ “এক ব্যক্তি মালিক ইবনে আনাসকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘হে আবদ-আল্লাহ, আমার স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করে দিতে পারে এমন কোন কিছু কি আছে? তিনি বলেন, যদি কোন কিছু স্মৃতিকে শক্তিশালী করতে পারে তা হলো পাপ করা ছেড়ে দেয়া।’” যখন কোনো মানুষ পাপ করে এটা তাকে উদ্বেগ ও দুঃখের দিকে ধাবিত করে। সে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তার অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায় এবং জ্ঞান অর্জনের মতো কল্যাণকর ‘আমল থেকে সে দূরে সরে পড়ে। তাই আমাদের উচিত পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
৪. বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করাঃ
একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখবো যে, আমাদের সকলের মুখস্থ করার পদ্ধতি এক নয়। কারো শুয়ে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, কারো আবার হেঁটে হেঁটে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়। কেউ নীরবে পড়তে ভালোবাসে, কেউবা আবার আওয়াজ করে পড়ে। কারো ক্ষেত্রে ভোরে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, কেউবা আবার গভীর রাতে ভালো মুখস্থ করতে পারে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ উপযুক্ত সময় ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ঠিক করে তার যথাযথ ব্যবহার করা। আর কুর’আন মুখস্থ করার সময় একটি নির্দিষ্ট মুসহাফ (কুর’আনের আরবি কপি) ব্যবহার করা। কারণ বিভিন্ন ধরনের মুসহাফে পৃষ্ঠা ও আয়াতের বিন্যাস বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। একটি নির্দিষ্ট মুসহাফ নিয়মিত ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের মধ্যে তার একটি ছাপ পড়ে যায় এবং মুখস্থকৃত অংশটি অন্তরে গভীরভাবে গেঁথে যায়।
৫. মুখস্থকৃত বিষয়ের উপর ‘আমল করাঃ
আমরা সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, কোনো একটি বিষয় যতো বেশিবার পড়া হয় তা আমাদের মস্তিষ্কে ততো দৃঢ়ভাবে জমা হয়। কিন্তু আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে অতো বেশি পড়ার সময় হয়তো অনেকেরই নেই। তবে চাইলেই কিন্তু আমরা এক ঢিলে দু’পাখি মারতে পারি। আমরা আমাদের মুখস্থকৃত সূরা কিংবা সূরার অংশ বিশেষ সুন্নাহ ও নফল সালাতে তিলাওয়াত করতে পারি এবং দু’আসমূহ পাঠ করতে পারি সালাতের পর কিংবা অন্য যেকোনো সময়। এতে একদিকে ‘আমল করা হবে আর অন্যদিকে হবে মুখস্থকৃত বিষয়টির ঝালাইয়ের কাজ। আবার কোনো কিছু শেখার একটি উত্তম উপায় হলো তা অন্যকে শেখানো। আর এজন্য আমাদেরকে একই বিষয় বারবার ও বিভিন্ন উৎস থেকে পড়তে হয়। এতে করে ঐ বিষয়টি আমাদের স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে গেঁথে যায়।
৬. মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাদ্য গ্রহণঃ
পরিমিত ও সুষম খাদ্য গ্রহণ আমাদের মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য একান্ত আবশ্যক। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ আমাদের ঘুম বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের অলস করে তোলে। ফলে আমরা জ্ঞানার্জন থেকে বিমুখ হয়ে পড়ি। তাছাড়া কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। সম্প্রতি ফ্রান্সের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যয়তুনের তেল চাক্ষুস স্মৃতি (visual memory) ও বাচনিক সাবলীলতা (verbal fluency) বৃদ্ধি করে। আর যেসব খাদ্যে অধিক পরিমাণে Omega-3 ফ্যাট রয়েছে সেসব খাদ্য স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকলাপের জন্য খুবই উপকারী। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য অনেক ‘আলিম কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য গ্রহণের কথা বলেছেন। ইমাম আয-যুহরি বলেন, “তোমাদের মধু পান করা উচিত কারণ এটি স্মৃতির জন্য উপকারী।”
মধুতে রয়েছে মুক্ত চিনিকোষ যা আমাদের মস্তিষ্কের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া মধু পান করার সাত মিনিটের মধ্যেই রক্তে মিশে গিয়ে কাজ শুরু করে দেয়। ইমাম আয-যুহরি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি হাদীস মুখস্থ করতে চায় তার উচিত কিসমিস খাওয়া।”
৭. পরিমিত পরিমাণে বিশ্রাম নেয়াঃ
আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের মস্তিষ্ক অনেকটা ব্যস্ত অফিসের মতো কাজ করে। এটি তখন সারাদিনের সংগৃহীত তথ্যসমূহ প্রক্রিয়াজাত করে। তাছাড়া ঘুম মস্তিষ্ক কোষের পুণর্গঠন ও ক্লান্তি দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে দুপুরে সামান্য ভাতঘুম আমাদের মন-মেজাজ ও অনুভূতিকে চাঙা রাখে। এটি একটি সুন্নাহও বটে। আর অতিরিক্ত ঘুমের কুফল সম্পর্কে তো আগেই বলা হয়েছে। তাই আমাদের উচিত রাত জেগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াহ বিতরণ না করে নিজের মস্তিষ্ককে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া।
৮. জীবনের অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারসমূহ ত্যাগ করাঃ
বর্তমানে আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ও জ্ঞান অর্জনে অনীহার একটি অন্যতম কারণ হলো আমরা নিজেদেরকে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় কাজে জড়িয়ে রাখি।ফলে কোনো কাজই আমরা গভীর মনোযোগের সাথে করতে পারি না। মাঝে মাঝে আমাদের কারো কারো অবস্থা তো এমন হয় যে, সালাতের কিছু অংশ আদায় করার পর মনে করতে পারি না ঠিক কতোটুকু সালাত আমরা আদায় করেছি। আর এমনটি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে নিজেদেরকে আড্ডাবাজি, গান-বাজনা শোনা, মুভি দেখা, ফেইসবুকিং ইত্যাদি নানা অপ্রয়োজনীয় কাজে জড়িয়ে রাখা। তাই আমাদের উচিত এগুলো থেকে যতোটা সম্ভব দূরে থাকা।


৯. হাল না ছাড়াঃ
যে কোনো কাজে সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো হাল না ছাড়া। যে কোনো কিছু মুখস্থ করার ক্ষেত্রে শুরুটা কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্ক সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেয়। তাই আমাদের উচিত শুরুতেই ব্যর্থ হয়ে হাল না ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

মানব জীবনে হালাল ও হারামের প্রভাব!

মানব জীবনে হালাল ও হারামের প্রভাব!




জেনে নিন মানব জীবনে হালাল ও হারামের প্রভাব! 
হালালঃ
আল্লাহ মানুষকে আশরাফুল মাখলূকাত করে সৃষ্টি করেছেন। আর এ বিশ্বের সবকিছুই তিনি তাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ- “তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন” (সূরা বাকারাঃ ২৯)
আল্লাহ জানেন, এ পৃথিবীর কোন বস্তু তাদের দেহ, মন , মস্তিষ্ক এবং আত্মার জন্য কল্যাণকর আর কোন বস্তু অকল্যাণকর, কোন জিনিস তাদের উপকার সাধনকারী আর কোন জিনিস ক্ষতিকারক। ফলে তিনি এমন সব বস্তু মানুষের জন্য হালাল করেছেন যা মানুষের কল্যাণ সাধন করে, তাদের দেহ ও মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে। হালাল খাদ্য অন্তরে নূর সৃষ্টি করে, অন্যায় ও অসৎ চরিত্রের প্রতি ঘৃণাবোধ জন্মায় এবং মানুষের মধ্যে সৎ গুণাবলী বৃদ্ধি করে। হালাল খাদ্য গ্রহণ করলে ইবাদাতে অধিকতর মনোযোগ আসে। তার কারণেই আল্লাহ নবীগণকে হালাল খাদ্যের প্রতি অনুপ্রাণিত করে বলেন – “হে রাসূলগণ! পবিত্র বস্তু হতে আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয় আমি পরিজ্ঞাত” (সূরা আল মুমিনঃ ৫১)
সকল মানুষকে সম্বোধন করে আল্লাহ পাক বলেন – “হে মানবমন্ডলী! তোমরা পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার কর।” (সূরা বাকারাঃ ১৬৮)
হারামঃ
হারাম খাদ্য, পানীয় এবং বস্তু অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কোন কোন খাদ্য ও পানীয়ের মধ্যে এমন সব উপাদান থাকে যা সুস্থ মস্তিষ্কে বিকৃতি ঘটায়, উন্মাদনা সৃষ্টি করে এবং মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ করে দেয়। যেমন- হিরোইন, মদ, আফিম, গাঁজা ইত্যাদি। এসব বস্তু মানুষের দেহের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে, সামাজিক পরিবেশ বিনষ্ট করে, আর্থিক দিক থেকে মানুষকে পঙ্গু ও দেউলিয়া করে দেয়। জুয়া, হাউজ, লটারি শরীআতের দৃষ্টিতে হারাম। এগুলো অপবিত্র এবং শয়তানের কাজ। এতে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়।
আল্লাহ তায়ালা এ প্রসঙ্গে বলেন – “হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। অতএব এগুলো বর্জন কর। যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা মায়িদাহঃ ৯০)  
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, হিংস্র প্রাণীর দেহে এমন সব জীবাণু আছে যা মানুষের দেহের জন্য ক্ষতিকর। কাজেই তা আমাদের জন্য হালাল হতে পারে না। এছাড়া হারাম খেলে মন্দ অভ্যাস ও অসচ্চরিত্রতা সৃষ্টি হয়, ইবাদাতে আগ্রহ থাকে না এবং দুআ কবুল হয় না।
নবী কারীম (সাঃ) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “বহুলোক দীর্ঘ সফর করে আসে এবং অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে বলতে থাকে, হে পরোয়ারদেগার! কিন্তু যেহেতু সে ব্যক্তির পানাহর সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পরিধেয় পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত – এমতাবস্থায় তার দুআ কি করে কবুল হতে পারে?” (মুসলিম, তিরমিযী) 

দোয়া কবুলের উত্তম সময় কখন জানেন কি ?

দোয়া কবুলের উত্তম সময় কখন জানেন কি ?




প্রত্যেক মানুষ আল্লাহ তাআলার নিটক ক্ষমা ও রহমতের প্রত্যাশী। সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় সর্বাবস্থায় আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ মানুষের জন্য অনেক বড় নিয়ামাত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা দোয়া করার জন্য এমন অসংখ্য সময় ও সুযোগ আমাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়। আসুন সহীহ হাদীস থেকে আমরা দেখে নেই দোয়া কবুল হবার সময়গুলো সম্পর্কে।
১। রাতের শেষ তৃতীয়াংশঃ
এই সময় দোয়া কবুল হবার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে অত্যন্ত জোরালো রেফারেন্স আছে। এটা প্রতিটি রাতের জন্যই প্রযোজ্য, শুধুমাত্র শবে বরাত, শবে মিরাজ বা কদর রাতে নয়।
আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “প্রত্যেকদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব (আল্লাহ) সবচেয়ে নীচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো?” (সহীহ বুখারী)
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আল্লাহর কাছে তাঁর একজন উপাস্য সবচেয়ে নিকটতম যে সময়টাতে আসতে পারে তা হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। সুতরাং তোমরা যদি পারো তাহলে তোমরা তাদের একজন হও যারা সে সময় আল্লাহর স্মরণ করে”। (তিরমিজি, নাসায়ী, আল হাকিম-সহীহ)
২। শেষ রাতের যে কোন একটি সময়ঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রাতে এমন একটি সময় আছে যে সময়টাতে কোন মুসলিমের এমনটা হয়না যে সে এই পৃথিবী কিংবা পরকালের জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইলো আর তাকে তা দেয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে”। (মুসলিম-৭৫৭)
৩। আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ঃ
মক্কা কিংবা মদীনার নামাজের জামায়াত শুরু হবার মাঝখানে অনেক মুসলিমকে দেখা যায় নামাজ শুরুর আগে হাত তুলে দোয়া করতে। এ সময়টা দোয়া কবুল হবার গুরুত্বপূর্ণ সময়।
আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয়না”। (আবু দাউদ-৫২১, তিরমিজি-২১২)

৪। জুম্মার দিন যে কোন একটি সময়েঃ
জুম্মার দিনে এমন অসাধারণ একটি নিয়ামাতের সময় আছে যে সময়টাতে দোয়া কবুল হবার বিশুদ্ধ বর্ণনা রাসুল সাঃ থেকে এসেছে।
আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাদের একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, ‘জুম্মার দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোন মুসলিম সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন’, এবং তিনি (রাসুল সাঃ) তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন”। (সহীহ বুখারী)।
কোন কোন স্কলার সে সময়টার ব্যপারে বলেছেন, তা হলো-ইমাম যখন মসজিদে প্রবেশ করেন সে সময় থেকে সালাত শেষ হবার সময় পর্যন্ত, কেউ বলেছেন দুই খুতবার মাঝখানে, কেউ আবার জোর দিয়ে বলেছেন তা হলো আসর থেকে মাঘরিব পর্যন্ত সময়টা।
আল্লাহই ভাল জানেন

৫। জমজমের পানি পান করার সময়ঃ
জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জমজম পানি হলো তার জন্য, যার জন্য এটি পান করা হয়”। (ইবন মাজাহ ৩০৬২, আহমাদ ৩/৩৫৭)।
অর্থাৎ, জমজমের পানি খাবার সময় আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয়, তা পাবার সম্ভাবনা আছে।

৬। সিজদাহর সময়েঃ
আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যে সমটাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলো সিজদাহর সময়। সুতরাং তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চাও”। (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ)
৭। রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠলেঃ
উবাদা ইবনুস সামিত রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যে কেউ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে আর বলে-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হা’মদু ওয়াহুয়া আ’লা কিল্লি শায়্যিন কা’দির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ এবং এরপর বলে ‘আল্লাহুম মাগফিরলি (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) এবং আল্লাহর কাছে চায়, তাহলে তার ডাকে সাড়া দেয়া হবে এবং সে যদি অজু করে সালাত আদায় করা, তাহলে তার সালাত কবুল করা হবে”। (সহীহ বুখারী)
৮। ফরজ সালাতের পরের সময়টাতেঃ
আবু উমামাহ রাঃ বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ কে জুজ্ঞেস করা হলো, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, কো সময়ের ডাক শোনা হয়?” তিনি বললেন, “রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ সালাতের পরে”। (তিরমিজি)।
অনেক স্কলারগন বলেছেন, এ সময়টা হলো সালাম ফেরানোর আগের সময় (আত্তাহিয়াতুর পর)।

৯। কদরের রাতেঃ
নিঃসন্দেহে লাইলাতুল কদর হলো একটি বছরে কোন মানব সন্তানের পাওয়া শ্রেষ্ঠ রাত। আল্লাহ বলেছেন,
“আমরা এটিকে (আল-কুরআন) কদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি।
তুমি কি জানো কদরের রাত্রি কি?
কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম”।
বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে এ রাতের সকল ইবাদত ও আল্লাহর কাছে চাহিদা পূরণের কথা বলা হয়েছে।

১০। বৃষ্টি হবার সময়ঃ
সাহল ইবন সা’দ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয়না। আযানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া”। (আবু দাউদ ২৫৪০)
১১। আযানের সময়ঃ
পূর্ববর্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী আযানের সময় দোয়া কবুল হবার ভালো সময়।
১২। মজলুম ও নির্যাতিত ব্যক্তিঃ
মজলুমের দোয়া এবং বদ দোয়া দুটোই আল্লাহর কাছে কবুল হবার সম্ভাবনা শতভাগ। রাসুলুল্লাহ সাঃ মুয়াজকে বলেছেন, “মজলুমের দোয়া থেকে সবসময় সতর্ক থেকো, কেননা মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা বা আশ্রয় থাকে না”। (সহীহ বুখারী)
১৩। মুসাফিরের দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিনটি দোয়া (আল্লাহর দ্বারা) ফিরিয়ে দেয়া হয়না। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া”। (বায়হাকি, তিরমিজি)
১৪। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়াঃ
পূর্ববর্র্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী।
১৫। রোজাদার ব্যক্তির দোয়াঃ
পূর্ববর্র্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী।
এছাড়া সমস্ত রমজান মাসই হলো আল্লাহর কাছে চাইবার শ্রেষ্ঠ সময়। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রমজান মাসে করুণার দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়”। (সহীহ বুখারী ১৮৯৯)

১৬। অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে উৎসরিত দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “এমন কোন বিশ্বাসী বান্দা নেই, যে তার অনুপস্থিত কোন ভাইয়ের জন্য দোয়া করে আর ফেরেশতারা বলে না ‘তোমার জন্যও তা হোক’”। (মুসলিম)
১৭। আরাফাতের দিনের দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দোয়ার ভেতর শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া”। (তিরমিজি, মুয়াত্তা মালিক)
১৮। জিহাদের মাঠে শত্রুর মুখোমুখি হলেঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুটি দোয়া কক্ষনো ফিরিয়ে দেয়া হয়না অথবা খুবই কম ফিরিয়ে দেয়া হয়। আযানের সমকার দোয়া আর সেই ভয়ংকর সময়কার দোয়া যখন দু’টি বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি হয়”। (আবু দাউদ ২৫৪০, ইবন মাজাহ)
১৯। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন ছাড়া আর এমন কোন দিন নেই, যে সময়ের সৎকাজ আল্লাহর কাছে তার চেয়ে বেশী প্রিয়”। (সহীহ বুখারী ৯৬৯)
২০। রোজদার ব্যক্তির ইফতারের সময়কার দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও আল্লাহর দ্বারা ফিরিয়ে দেয়া হয়না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে, রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ ইফতার না করে), ন্যায়পরায়ণ শাসক, নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া”। (আহমাদ, তিরমিজি)

দাওয়াতের ফযীলত !

দাওয়াতের ফযীলত !


দাওয়াতের ফযীলত : মানুষের নিকট হক-এর এই দাওয়াত দেওয়া ফরয। রাসূল (সাঃ) এসেছিলেন ‘আল্লাহর পথের দাঈ’ হিসাবে (আহযাব ৩৩/৪৬)। তিনি বলেন, (১) بَلِّغُوا عَنِّى وَلَوْ آيَةً- ‘একটিমাত্র আয়াত হলেও তা আমার পক্ষ থেকে মানুষের নিকট পৌঁছে দাও…।’[17] (২) তিনি আরো বলেন, مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ ‘কেউ যদি কোন নেক কাজের পথনির্দেশ দেয়, সে ঐ নেক কাজ সম্পাদনকারীর সমতুল্য ছওয়াব পায়’।[18]
(৩) রাসূল (সাঃ) বলেন,لاَنْ يَّهْدِىَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُوْنَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ- ‘যদি তোমার দাওয়াতের মাধ্যমে একজন লোককেও আল্লাহ সুপথ প্রদর্শন করেন, তবে সেটা তোমার জন্য সর্বোত্তম লাল উট কুরবানীর চাইতে উত্তম হবে’।[19]
(৪) দাওয়াত এককভাবে বা সংঘবদ্ধভাবে দিতে হবে। আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, قُلْ هَذِهِ سَبِيْلِيْ أَدْعُوْا إِلَى اللهِ عَلى بَصِيْرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ وَسُبْحانَ اللهِ وَما أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ‘বল! এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে, জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১২/১০৮)
(৫) দাওয়াত সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে দিতে হবে। রাসূল (সাঃ) বলেন, إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوُا الْمُنْكَرَ فَلَمْ يُغَيِّرُوهُ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللهُ بِعِقَابِهِ‘যখন মানুষ অন্যায়কর্ম হ’তে দেখে, অথচ তা প্রতিরোধের চেষ্টা করে না। আল্লাহ সত্বর তাদের সকলের উপর তার বদলা নিবেন।’ তিনি বলেন, কোন সম্প্রদায়ে যখন পাপ ছড়িয়ে পড়বে এবং সেই সমাজে ভাল লোকের সংখ্যা বেশী হওয়া সত্ত্বেও তারা তা প্রতিরোধের কোন চেষ্টা নিবে না, তখন তাদের সকলের উপর আল্লাহ ব্যাপক গযব নামিয়ে দিবেন’।[20]

(৬) তিনি বলেন, مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ‘যে ব্যক্তি কাউকে হেদায়াতের পথে ডাকে, তার জন্য সেই পরিমাণ ছওয়াব রয়েছে, যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে। অথচ এটি তাদের ছওয়াব থেকে কোন অংশ কমাবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মানুষকে ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকে, তার জন্য সেই পরিমাণ গোনাহ রয়েছে, যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে। অথচ এটি তাদের গোনাহ থেকে কোন অংশ কমাবে না’।[21]
(৭) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) সফরে বের হয়েছেন। এমন সময় তাঁকে তাঁর ছোট ভাই কুছাম (মৃ: ৫৭ হিঃ) অথবা কন্যার মৃত্যু সংবাদ দেওয়া হ’ল। তিনি ইন্না লিল্লাহপাঠ করলেন এবং বললেন, আল্লাহ লজ্জা নিবারণ করেছেন। খাদ্য ও পোষাক দান করেছেন। ছওয়াবও আল্লাহ দিবেন। অতঃপর রাস্তার একপাশে গিয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করলেন এবং অনেকক্ষণ বসে রইলেন। অতঃপর সওয়ারীর দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় সূরা বাক্বারাহ ৪৫ আয়াতটি পাঠ করলেন। যার অর্থ ‘তোমরা ছবর ও ছালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর’ (ইবনু জারীর, কুরতুবী, ইবনু কাছীর; বাক্বারাহ ২/৪৫)। এই ঘটনার মধ্যে আল্লাহর পথে দাওয়াতের ব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরামের গভীর নিষ্ঠা ও নিঃস্বার্থ আন্তরিকতার প্রমাণ পাওয়া যায়। বস্ত্ততঃ দাওয়াতের মাধ্যমেই দ্বীন বেঁচে থাকে।
(৮) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার অথবা সপ্তাহে বেশীর বেশী দুই বা তিনদিন মানুষকে ডেকে মজলিস করে দাওয়াত দিতে বলতেন।[22] অনুরূপভাবে ইবনু মাসঊদ (রাঃ) প্রতি বৃহস্পতিবারে দাওয়াত দিতেন।[23]
(৪) ছবর (الصبر) : সমাজগত গুণের দ্বিতীয়টি হ’ল, ‘পরস্পরকে ছবরের উপদেশ দেওয়া’(وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ)। আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ ‘ধৈর্য্যশীল বান্দাদের বেহিসাব পুরস্কার দান করা হবে’ (যুমার ৩৯/১০)
‘ছবর’ অর্থ حبس النفس عما لا ينبغى فعله ‘যে কাজ করা উচিৎ নয়, সে কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা’। যেমন কোন রোগ-পীড়া বা বিপদাপদ হ’লে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া, হে ভাই! ছবর কর। এটি তাক্বদীর, যা পূর্বেই লিপিবদ্ধ ছিল। দিশেহারা হয়ো না। আল্লাহর নিকটে এর উত্তম বদলা প্রার্থনা কর। যেমন মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের সান্ত্বনা দিয়ে রাসূল (সাঃ) নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়তে বলেন, اَللَّهُمَّ أَجِرْنِي فِيْ مُصِيْبَتِيْ وَأَخْلِفْ لِيْ خَيْرًا مِّنْهَا ‘হে আল্লাহ! আমাকে বিপদে ধৈর্য ধারণের পারিতোষিক দান কর এবং আমাকে এর উত্তম প্রতিদান দাও’।[24] এমনিভাবে ছালাতে জামা‘আত থেকে গাফেল ব্যক্তিকে জামা‘আতে উদ্বুদ্ধ করা, কৃপণ ব্যক্তিকে দানে উদ্বুদ্ধ করা, বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকে নাজী ফের্কাভুক্ত হবার ও সেকারণে জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের উপদেশ দেওয়া, হারামে লিপ্ত ব্যক্তিকে হারাম থেকে বাধা দেওয়া ও হালাল-এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা ইত্যাদি।
বস্ত্ততঃ হক-এর উপদেশ দিলে বা হক-এর পথে দাওয়াত দিলে বাতিল ক্ষেপে যাবে। তারা হকপন্থীদের কণ্ঠ স্তব্ধ করার চেষ্টা করবে। তাদের উপরে নানাবিধ অত্যাচার চালাবে। এমতাবস্থায় হকপন্থী ব্যক্তিকে হক-এর উপরে দৃঢ় থেকে উপদেশ দান করতে হবে। কোন অবস্থাতেই হক থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না বা পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে বাতিলের সঙ্গে আপোষ করা যাবে না।
হক-এর অনুসারী হওয়ার অপরাধে বাতিলের পূজারী আবু জাহলদের অত্যাচারে নিগৃহীত বেলাল, খাববাব, খোবায়েব, আছেম, ইয়াসির পরিবার প্রমুখ সত্যসেবীগণ ছবর ও দৃঢ়তার যে অতুল্য নমুনা রেখে গেছেন, যুগে যুগে তা সকল হকপন্থীর জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে। ইয়াসির পরিবারের উপরে অমানুষিক নির্যাতনের মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে ব্যথাহত রাসূল (সাঃ) সেদিন তাদের সান্ত্বনা দিয়ে ছোট্ট একটি বাক্য উচ্চারণ করে বলেছিলেন, صَبْرًا يَا آلَ يَاسِرْ فَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الْجَنَّةُ ‘ছবর কর হে ইয়াসির পরিবার! তোমাদের ঠিকানা হ’ল জান্নাত’। তপ্ত মরুর বুকে নির্যাতিত ইয়াসির পরিবারের ব্যথিত হৃদয়ে রাসূল (সাঃ)-এর এই সান্ত্বনাবাক্য সেদিন যে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিয়েছিল, আজও তা হ’তে পারে যেকোন হকপন্থীর জন্য শক্তির আবেহায়াত। তবে এই ছবর সর্বাবস্থায় নয়। বরং শক্তি থাকলে যালেমের যুলুম প্রতিরোধ করতে হবে এবং এজন্য সাধ্যমত শক্তি অর্জনের নির্দেশ এসেছে রাসূল (সাঃ)-এর মাদানী জীবনে (আনফাল ৮/৬০)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, الْمُؤْمِنُ الْقَوِىُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيْفِ ‘শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর নিকট উত্তম ও অধিক প্রিয় দুর্বল মুমিনের চাইতে’।[26]
‘ছবর’ তিন প্রকার : (১) বিপদে ছবর করা (الصبر فى المصيبة) (২) পাপ থেকে ছবর করা অর্থাৎ বিরত থাকা (الصبر عن المعصية)(৩) আল্লাহর আনুগত্যে ছবর করা অর্থাৎ দৃঢ় থাকা(الصبر على الطاعة)। প্রথমটি ‘আম’ বা সাধারণ। দ্বিতীয়টি ‘হাসান’ বা সুন্দর এবং তৃতীয়টি ‘আহসান’ বা সবচেয়ে সুন্দর। যদি নাকি সবগুলি কেবল আল্লাহর ওয়াস্তে হয়। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সত্যের পথে উক্ত তিন প্রকার ছবর এখতিয়ার করার তাওফীক দান করেন- আমীন!

যে দশটি সূরা দশটি জিনিস হতে রক্ষা করে !

দশটি সূরা দশটি জিনিস হতে রক্ষা করেঃ

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

[১] সূরা ফতিহা আল্লাহর গজব হতে রক্ষার কারণ হয়।

[২] সূরা ইয়াসীন কিয়ামতের দিন পিপাসার্ত হওয়া থেকে রক্ষার মাধ্যম হবে।

[৩] সূরা দুখান কিয়ামতের দিনের ভয়াল অবস্থা হতে রক্ষার মাধ্যম হবে।

[৪] সূরা ওয়াকি’আ দরিদ্রতা হতে রক্ষার কারণ হয়।

[৫] সূরা মূলক কবরের আযাব হতে রক্ষার মাধ্যম হবে।

[৬] সূরা কাওসার শত্রুর অনিষ্ট হতে রক্ষার কারণ হয়।

[৭] সূরা কাফিরুন মৃত্যুর সময় কুফরী হতে রক্ষার কারণ হয়।

[৮] সূরা ইখলাস মুনাফিকী হতে রক্ষার কারণ হয়।

[৯] সূরা ফালাক হিংসুকের হিংসা হতে রক্ষার কারণ হয়।

[১০] সূরা নাস যাবতীয় ওয়াসওয়াসা হতে রক্ষার কারণ হয়।

ঈমানের স্বাদ পাওয়ার জন্য যে তিনটি গুণের অধিকারী হতে হবে !!!

ঈমানের স্বাদ পাওয়ার জন্য যে তিনটি গুণের অধিকারী হতে হবে !!!



“আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সাঃ)  বলেনঃ তিনটি গুণ যার মধ্যে  রয়েছে, সে ঈমানের স্বাদ পায়ঃ
১। যার কাছে আল্লাহ অ তাঁর রাসূল অন্য সব কিছু থেকে অধিক প্রিয়।
২। যে একমাত্র আল্লাহরই জন্য কোন বান্দাকে ভালোবাসে এবং
৩। আল্লাহ তা’আলা কুফর থেকে মুক্তি প্রদানের পর যে কুফর-এ ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতোই অপছন্দ করে।”
(সহীহ্ বুখারী )

ইসলামে যা যা প্রথম !!!

ইসলামে যা যা প্রথমঃ


সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী       –>   হযরত খাদিজা (রাঃ)
পুরুষদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী –> হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)
বালকদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী –> হযরত আলী (রাঃ)
ক্রীতদাসদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী –> হযরত যায়ীদ (রাঃ)
ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন       –> হযরত বিলাল (রাঃ)
ইসলামের প্রথম শহীদ         –> হযরত সুমাইয়া (রাঃ)
পুরুষদের মধ্যে প্রথম শহীদ      –> হযরত ইয়াসির (রাঃ)
ইসলামে প্রথম গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন –> হযরত খোবাইয়া (রাঃ)
ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ     –> বদর যুদ্ধ (প্রত্যক্ষ)
আযানের পদ্ধতি প্রথম স্বপ্ন দেখেন –> হযরত আবদুল্লাহ বিন যায়িদ (রাঃ)
ইসলামের প্রথম ঘর         –> কা’বা ঘর
ইসলামের সর্বপ্রথম মসজিদ       –> কুবায় নির্মিত মসজিদ
প্রথম গঠিত সমাজকল্যাণ সংগঠন  –> হিলফুল ফুযুল
প্রথম মুসলিম নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠাতা –> হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ)
ঈদের সালাত প্রথম আদায় হয়   –> ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে
প্রথম জাহান্নামে যাবে          –> কাবিল

নামায সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল !!

নামায সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল !!



আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্‌মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহ ।
সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি পরিপূর্ণ দ্বীন হিসাবে আমাদেরকে ইসলাম দান করেছেন, যে দ্বীনে মানুষের পক্ষ থেকে কোন সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন হয় না ৷ সালাত ও সালাম তাঁরই রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ৷ দ্বীন হিসাবে যা কিছু এসেছে তিনি (সাঃ) তা উম্মতের কাছে পৌছে দিয়েছেন ও নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে গেছেন ৷ তার সাহাবায়ে কিরামের প্রতি আল্লাহর রাহমাত বর্ষিত হোক ৷

ইসলামের পাঁচ রোকনের মধ্যে দ্বিতীয় রোকন হচ্ছে নামায । এবাদত বন্দেগীর মধ্যে নামাযই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল ।
এবাদত করার জন্য আমি (আল্লাহ) মানব ও জ্বীন জাতি সৃষ্টি করেছি (আয্ যারিয়াত, আয়াত ৫৬); নামায সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষনা-
নামায কায়েম করুন । নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে (আনকাবুত, আয়াত ৪৫);
হাদিস- রোজ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকে সবার আগে যে প্রশ্নটা আল্লাহ তায়ালা করবেন সেটা হবে নামায (আবু দাউদ ১ম খন্ড বুক অফ সালাহ ৩০০ অধ্যায় হাদিস নং ৮৬৩);
আমাদের নামাযকেই সঠিক পদ্ধতিতে কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্ভূল ভাবে আদায় করার চেষ্টা করতে হবে ।
নামায সম্পর্কে কোরআনের কোন সুরায় কোন আয়াতে কি আছে এবং সঠিক পদ্ধতি হাদিসের কোন গ্রন্থে, কোন খন্ডে, কোন অধ্যায়, কোন পৃষ্টায় বা কত নম্বর হাদিসে আছে তা অনেক মুসলমানদের জানা নেই ।
অতএব দূর্ভোগ সে সব নামাযীর, যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর । যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে (আল মাউন, আয়াত ৪, ৫, ৬);
এবং যারা তাদের নামাযে যত্নবান, তারাই জান্নাতে সম্মানিত হবেন (মা’আরিজঃ আয়াত ৩৪, ৩৫);
প্রকৃত পক্ষে সঠিক দলিল ভিত্তিক নামায শিক্ষার কোন বই বাজারে নেই বললেই চলে । আমি আমার সামান্য চেষ্টার মাধ্যমে কোরআনের আয়াত ও হাদিসগুলোর আংশিক বা মুল কথাগুলো তুলে ধরলাম এবং বিস্তারিত দেখার জন্য পূর্ণাঙ্গ দলিল পেশ করলাম ।
এগুলো যাচাই করে সহিহ শুদ্ধ হলে মানতে পারেন এবং সঠিক না হলে কারো মুখের কথা না শুনে কোরআন ও হাদিসের পূর্ণাঙ্গ দলিল নিবেন ।
কয়েকজন জ্ঞানীর শরনাপন্ন হবেন এবং যে দলিল সংখ্যায় বেশী মিলবে তা মুল গ্রন্থের (কোরআন ও হাদিস) সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন ।
যারা কোরআন হাদিসের প্রমান না দিয়ে বিভিন্ন লেখকের বই দেখাবেন তাদেরকে বলি- কোরআনের ঘোষনাঃ
আজ আমি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম । তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম (মায়েদা, আয়াত ৩);
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিওনা এবং জানা সত্বে সত্যকে তোমরা গোপন কর না (বাক্বারাহ, আয়াত ৪২);
নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে বিরোধীতা করে তারা লাঞ্ছিত হবে (মুজাদালা আয়াত ২০);
যারা রাসুলের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের সতর্ক থাকা উচিত যে তারা যে কোন বিপদের সম্মুখীণ হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে (নূর আয়াত ৬৩);
হে মুমিন গণ! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর । নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন (বাক্বারাহ, আয়াত ১৫৩);
মুমিন গণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয় ও নম্র (মু’মিনুন, আয়াত ১, ২);
এমন লোকেরা যাদেরকে ব্যবসা-বানিজ্য ও ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায পড়া থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না । তারা ভয় করে সেই দিনকে, যে দিন অন্তর ও দৃষ্টি সমূহ উল্টে যাবে (আন্ নূরঃ আয়াত-৩৭);
দুনিয়ায় কাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব করতে হবে আল্লাহ বলেন-
তোমাদের বন্ধুতো আল্লাহ তাঁর রাসুল এবং মুমিন বৃন্দ যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র (মায়েদা, আয়াত ৫৫)